অমিত সরকার, কলকাতা: একজন ছাত্র বা ছাত্রীর ছোট থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত জীবনের সবচেয়ে বড় প্রথম পরীক্ষা হল মাধ্যমিক পরীক্ষা। নতুন বছর পড়ার পর সাথে সাথে কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষার পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার চাপও এসে চলেছে ঘাড়ের কাছে। তবে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু কবে থেকে? এবং তার এডমিট কার্ডই বা দেওয়া হবে কবে থেকে? এ সমস্ত বিষয় নিয়ে আজকে আলোচনা করা হয়েছে আপনারা এক নজর সমস্ত তথ্য দেখে নিন।
মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়সূচি
চলতি বছরে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হবে ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ থেকে। সেই পরীক্ষা চলবে ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখ পর্যন্ত। যেহেতু পরীক্ষায় বসতে গেলে এডমিট কার্ড খুবই দরকার কারণ এডমিট কার্ড ছাড়া পরীক্ষা হলে ঢুকতে দেওয়া হবে না। সেই অ্যাডমিট কার্ড বিতরণ করা হবে জানুয়ারি মাসের ৩০ তারিখ, সকাল ১১ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত। এডমিট কার্ডের যদি কোন ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকে তাহলে তা জানাতে হবে ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।
অ্যাডমিট কার্ড
এবারে পর্ষদের তরফ থেকে বিভিন্ন জেলায় জেলায় ক্যাম্প অফিস করা হয়েছে। আর সেই ক্যাম্প অফিস থেকে এডমিট কার্ড দেওয়া হবে সমস্ত স্কুল গুলিকে। ছাত্র ছাত্রীরা সেই এডমিট কার্ড পাবে ৩০ শে জানুয়ারি। এডমিট কার্ড হাতে পাওয়ার পর অ্যাডমিট কার্ডে যদি কোন ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে তাহলে তা সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। স্কুল কর্তৃপক্ষকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দপ্তরে গিয়ে লিখিত দরখাস্তের মাধ্যমে সেই অ্যাডমিট কার্ডের ভুলভ্রান্তি ঠিক করাতে হবে। এক্ষেত্রে এডমিট কার্ডের কোন ভুল সংশোধন কোন আবেদন অনলাইনের মাধ্যমে গ্রহণ করা হবে না।
মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিন –
- ১০ ফেব্রুয়ারি (সোমবার): প্রথম ভাষা।
- ১১ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার): দ্বিতীয় ভাষা।
- ১৫ ফেব্রুয়ারি (শনিবার): অংক।
- ১৭ ফেব্রুয়ারি (সোমবার): ইতিহাস।
- ১৮ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার): ভূগোল।
- ১৯ ফেব্রুয়ারি (বুধবার): জীবনবিজ্ঞান।
- ২০ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার): ভৌতবিজ্ঞান।
- ২২ ফেব্রুয়ারি (শনিবার): ঐচ্ছিক বিষয়।
এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষাটি পরপর রাখা হয়েছে। যেমন প্রথম দিনই প্রথম ভাষা এবং পরের দিন দ্বিতীয় ভাষা। তারপর ছুটি রয়েছে চারদিন। চার দিন পরে হবে অংক পরীক্ষা। পরবর্তী ইতিহাস পরীক্ষার আগেও ছাত্রছাত্রীরা একদিন ছুটি পাবে আর বাকি কোন পরীক্ষার মধ্যে কিন্তু আর কোন ছুটি নেই। বাকি পরীক্ষাগুলি পর পরই হবে।
পরীক্ষার সময়সীমা
এক্ষেত্রে পরীক্ষা শুরু হবে সকাল ১০ঃ৪৫ মিনিট থেকে। পরীক্ষা শেষ হবে দুপুর ২ টো নাগাদ। তবে পরীক্ষার শুরুর প্রথম ১৫ মিনিট লেখা যাবে না সেই ১৫ মিনিট ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশ্নপত্র পড়ার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। সকাল ১১ টা থেকে পড়ুয়ারা পরীক্ষার লেখা শুরু করতে পারবে এবং পরের তিন ঘন্টা চলবে তাদের সম্পূর্ণ পরীক্ষার সময়সীমা।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সিদ্ধান্ত!
এ বছরই প্রথম মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে বিশেষভাবে সক্ষম পড়ুয়াদের জন্য আলাদা করে রুল টানা উত্তরপত্র পাঠানো হবে। আসলে দেখা গিয়েছে যে বেশ কিছু বিশেষভাবে সক্ষম পড়ুয়া পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেওয়ার সময় রাইটার নেয় না। ফলে তাদের উত্তর লেখার ক্ষেত্রে অনেক সময় লাইন সোজা থাকে না। সেই অসুবিধা দূর করার জন্য এবছর থেকে রুল টানা উত্তর পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে পর্ষদ। পর্ষদের পক্ষ থেকে যে বিশেষ উত্তরপত্র পাঠানো হবে তার প্যাকেটের উপর লেখা থাকবে CWSN (চিল্ড্রেন উইথ স্পেশাল নিড)।
রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ
নবম থেকে দশম শ্রেণীতে ওঠার পর মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য সমস্ত পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হয়। ২০২৫ এ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে ৩১/৮/২০২৪ তারিখ থেকে। তারপর পড়ুয়াদের আরো দু’দফায় অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তাতে মোট ৯,৩২৬ টি স্কুল তাদের পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে। তবে এখনো বেশ কিছু পড়ুয়া রয়েছে যারা এই তিন দফাতেও রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেনি তাদের জন্য পর্ষদ আবারো সুযোগ দিতে চলেছে রেজিস্ট্রেশনের। পরবর্তী রেজিস্ট্রেশনের ডেট দিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখ সকাল ১১টা থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫ টা পর্যন্ত। এবারে ও এই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে অনলাইনের মাধ্যমে সমস্ত স্কুল গুলি। এবারে আর বিনামূল্যে এই রেজিস্ট্রেশন করা হবে না। যারা এই রেজিস্ট্রেশন করাবে তাদের লেট ফাইন দিতে হবে, তবে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হবে এমনটাই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গাইডলাইন
এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য ১১ দফা গাইডলাইন বেঁধে দিয়েছে। যা মানতেই হবে শিক্ষক শিক্ষিকাদের।পর্ষদের পক্ষ থেকে বিশেষ করে বলে দেওয়া হয়েছে যে মাধ্যমিক পরীক্ষা যাতে কোনভাবেই নকল করা না হয় সেটার উপর বিশেষভাবে নজর রাখতে।
- শিক্ষক শিক্ষিকাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পরীক্ষা কেন্দ্রে রিপোর্টিং করতে হবে।
- পর্ষদের পক্ষ থেকে যে নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে শিক্ষক শিক্ষিকাদের মানতে হবে।
- সব সময় পড়ুয়াদের ওপর নজর রাখতে হবে পরীক্ষকদের। যদি কোন আপত্তিকর বিষয় চোখে পড়ে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
- শুধুমাত্র পরীক্ষা হলে নয় স্কুলের শৌচালয় সহ সমস্ত পরীক্ষা কেন্দ্রে নজর রাখতে হবে কোথাও যাতে কোনো রকম অনিয়ম কিছু না ঘটে।
- যে স্কুলগুলোতে সেন্টার হচ্ছে না সেখানকার শিক্ষক শিক্ষিকাদেরও দায়িত্ব নিতে হবে।
- সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকাদের পরীক্ষার পরে উত্তরপত্র সুরক্ষিতভাবে বেঁধে রাখতে হবে।
- পরীক্ষা সংক্রান্ত মধ্যশিক্ষা পর্ষদের যে বৈঠক হয় সেখানে সংশ্লিষ্ট স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিতদের যোগ দিতে হবে।