অমিত সরকার, নয়াদিল্লি: ২০২৫ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করার আগেই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি সাধারণ মানুষ এবং মধ্যবিত্তদের কথা চিন্তা করে একটি বাজেট তৈরি করেছেন। এতদিন জল্পনা চলছিল যে বাজেটে মধ্যবিত্ত মানুষের আয়ের ওপর করের পরিমাণ কমতে চলেছে।
সেই জল্পনাকে ঘোষণার মাধ্যমে সত্য বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন এবার বাজেটে ইনকাম ট্যাক্স বা আয় করে বড়সড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া TDS এবং TCS কমানো হবে যার ফলে সাধারণ মানুষের হাতে আরো বেশি টাকা থাকবে। এছাড়া বেতনের ওপরে যে TDS কাটা হয় তার পরিমাণও কমানো হবে।
আরো শোনা যাচ্ছে যে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন নাকি ভারার উপর ছাড় ২.৫ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে ছয় লক্ষ টাকা করা হবে। এছাড়া বিদেশে যে পরিমাণ টাকা পাঠানো হয় তার পরিমাণ 10 লক্ষ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। যাদের প্যান নেই, তাদের টিডিএস কাটা হবে এখন থেকে।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য
শনিবার বাজেট ভাষণে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন যে সরকার মধ্যবিত্তদের ওপর ভরসা রাখছে তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবং বাজেট স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনের পরিমাণ ৭৫ হাজার টাকায় রাখা হয়েছে। তবে ষাটোর্ধ্বদের ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনের পরিমাণ ১ লক্ষ টাকা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। অর্থাৎ ১২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর কোন কর দিতে হবে না।
এছাড়া নির্মলা সীতারামন আরো দাবি করেন যে আয়করের এই নতুন আইন তৈরি হলে কর দাতারা যথেষ্ট সুরাহা পাবেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এই নতুন কাঠামো ভোগ্য ব্যয়ের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে যা অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে পারে বলে মনে করছেন। তাছাড়া নতুন এই আইন সরাসরি মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত শ্রেণীর কর দাতাদের উপর প্রভাব ফেলবে।
মধ্যবিত্তদের উপহার
২০২৫ এর বাজেটে মধ্যবিত্তদের জন্য রয়েছে উপহার। কারণ এবারের বাজেটে ১২ লক্ষ টাকা আয়ের উপর কোন রকম কর দিতে হবে না মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষকে। এর আগে পর্যন্ত কিন্তু ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মানুষকে কর দিতে হতো কিন্তু এই সময় সেই সীমা আরো ৫ লক্ষ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হল যার ফলে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কোন কর দিতে হবে না মধ্যবিত্ত মানুষকে। তবে এক্ষেত্রে কিন্তু ৭৫ হাজার টাকার ট্যাক্স ডিডাকশন দিতে হবে।
পুরনো ট্যাক্স এর হিসাব
এর আগে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আইন কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে বিভিন্ন আয়ের উপর কিন্তু বিভিন্ন কর বসানো হয়েছিল যেমন-
- ৩-৭ লক্ষ টাকার উপর ৫% কর।
- ৭ থেকে ১০ লক্ষ টাকার ওপর ১০% কর।
- ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকার ওপর ১৫% কর।
- ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকার ওপর ২০% কর।
- ১৫ লক্ষ টাকার বেশি আয়ের উপর ৩০% কর।
নতুন কর কাঠামো অনুযায়ী
- ০ থেকে ৪ লাখ পর্যন্ত কর দিতে হবে না।
- ৪ থেকে ৮ লাখ টাকার ওপর দিতে হবে ৫% কর।
- ৮ থেকে ১২ লাখ টাকার ওপর ১০% কর।
- ১২ থেকে ১৬ লাখ টাকার ওপর ১৫% কর।
- ১৬ থেকে ২০ লাখ টাকার ওপর ২০% কর।
- ২০ থেকে ২৪ লাখ টাকার উপর ২৫% কর।
- ২৪ থেকে তার বেশি আয়ের উপরে ৩০% কর।
অন্যান্য কর বেনিফিট
নতুন এই বাজেটে কিন্তু বিভিন্ন রকম বেনিফিট রয়েছে যেমন ২০২৪ সালের বাজেটের NPS এর উপর ডিডাকশন ১৪% পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে আগে বেসরকারি খাতে নিয়োগকর্তার বিনিয়োগের ওপর মাত্র ১০ শতাংশ অবদানের উপর ছাড় পাওয়া যেত এখন তা বাড়িয়ে ১৪ শতাংশ করা হয়েছে। এর অর্থ হলো যে নিয়োগকর্তার অবদানের ১৪% পর্যন্ত ট্যাক্সের আওতার বাইরে থাকবে।
এছাড়া এই বাজেটে ESOP ওপরও ছাড় রয়েছে। এক্ষেত্রে বহুজাতিক কোম্পানিতে কর্মরত কর্মীদের প্রদত্ত ছাড় দ্বিগুণ করা হয়েছিল আসলে বহুজাতিক সংস্থার কর্মীরা কখনো কখনো বিদেশে পোস্টিং পান এবং তাদের আওতায় শেয়ার দেয় সংস্থা। আগে নিয়ম ছিল ১০ লক্ষ টাকার বেশি সম্পদ পাওয়া গেলে তা প্রকাশ করতে হবে। নাহলে সরকার দশ লক্ষ টাকা জরিমানা করতো। তবে সেই নিয়ম পরিবর্তন করে বর্তমানে তা বাড়িয়ে ২০ লক্ষ টাকা করা হয়েছে, যার অর্থ হল ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সম্পদ প্রকাশ না করার জন্য কোন জরিমানা করা হবে না।