অমিত সরকার, কলকাতা: বর্তমানে যে বিষয়টা নিয়ে নিন্দনীয় ঝড় উঠেছে গোটা বিশ্বজুড়ে তা হল ভারতবর্ষের জম্মু কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিদের হামলার হত্যাকাণ্ড। যেখানে পর্যটকদের পরিচয় পত্র জেনে বেছে বেছে হিন্দুদের গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়েছে আর তাতেই শিহরিত হয়েছে ভারত সহ গোটা বিশ্ব।
যেহেতু ধর্মপরিচয় জেনে মুসলিমদেরকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র হিন্দুদেরকে গুলি করে মারা হয়েছে সেই ঘটনায় নিন্দার ঝড় এবং প্রতিবাদের সুর উঠেছে গোটা বিশ্বজুড়ে। যেহেতু মুসলিমদের বিরুদ্ধে এ জঙ্গি হামলার আরোপ উঠেছে, তাই ইসলাম ধর্মের এক শিক্ষক এবার সরাসরি জানিয়ে দিচ্ছেন যে জঙ্গি হামলার নিন্দা করে তিনি ধর্মত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন।
কে সেই শিক্ষক?
জানা যায় তিনি উত্তর চব্বিশ পরগনার বাদুড়িয়ার শিক্ষক সাবির হোসেন। তিনি বসিরহাটের বাদুড়িয়া পুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি মূলত স্বরূপনগর ব্লকের নির্মাণ আদর্শ বিদ্যাপীঠের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই তার একটি ভিডিও বার্তা সমাজমাধ্যমে প্রচুর ভাইরাল হয়। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন যে জঙ্গি হামলার নিন্দা করে তিনি ধর্মত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তবে এখনো পর্যন্ত তিনি আইনের রাস্তায় না হাঁটলেও পরবর্তীতে তিনি আইনি ভাবেই ধর্মহীন হতে চলেছেন।
সমাজ মাধ্যমে সাবির হোসেন বলেছেন,”পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া বর্বরোচিত জঙ্গি হানায় আমি মর্মাহত এর তীব্র নিন্দা করছি। এই জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে আমি আমার ধর্ম ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তিনি আরো জানান যে এই হামলার ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের যেন চরম শাস্তি হয়। সমস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের কাছে আহবান করছি এই জঙ্গি হানার বিরুদ্ধে এগিয়ে আসুন আপনারাও।
তার ভাইরাল হওয়া ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন তিনি মূলত পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হানার প্রতিবাদে তিনি ধর্ম ত্যাগ করতে চলেছেন এ বিষয়ে সাবিরের সাফ কথা, ” আমরা সবসময় বলি জঙ্গিদের কোন ধর্ম হয় না। কিন্তু এক্ষেত্রে জঙ্গীরা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ব্যবহার করেছে ধর্মপরিচয় জিজ্ঞাসা করে করে মানুষকে হত্যা করেছে।” একই সঙ্গে তিনি আরো বলেন আমি কোন ধর্মকে ছোট করছি না। কাউকে আঘাত করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমি ছোটবেলা থেকে যে পরিবেশে বড় হয়েছি সেখানে বরাবরই বিধর্মীদের প্রতি একটা বিদ্বেষ লক্ষ্য করে এসেছি। আমরা সবসময় বলে জঙ্গিদের কোন ধর্ম হয় না কিন্তু পহেলগাঁওয়ে ক্ষেত্রে জঙ্গিরা ধর্মকে হাতিয়ার করেছে। আমিও সেই ধর্মের সঙ্গে জড়িত, সত্যি বলতে এতে আমি লজ্জিত বোধ করছি।”
তিনি আরো জানান যে আমি যেখানেই যাই সেখানে বারবার ধর্মের কারণে আমাকে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। আমি একজন শিক্ষক। আমি মানুষ গড়ার কারিগর। কিন্তু যে দায় আমার নয় তা আমি কেন মাথা পেতে নেব। আমি নিজের আত্ম গ্লানি থেকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং আগামী দিনে সরকারি ভাবে নিজেকে ধর্মহীন ঘোষণা করতে চাই।
তবে পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার পর থেকে কিন্তু গোটা বিশ্ববাসী দুঃখ প্রকাশ করেছে। এবং এই হামলার পর থেকে বদলার রব উঠেছে গোটা দেশে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেউ হুংকার দিতে শোনা গেয়েছে তিনি হুশিয়ার সুরে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, এমন জবাব দেওয়া হবে কল্পনাও করতে পারবে না। ইতিমধ্যেই কিন্তু সে জবাব দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে কারণ জঙ্গিদের মদতপুষ্ট পাকিস্তানকে বেকায়দায় ফেলার জন্য একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়া দিল্লি। পাকিস্তানের ভিসা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, এবং যে সমস্ত পাকিস্তানি মানুষ ভারতে রয়েছে তাদের দ্রুত ভারত ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি ওয়াগা বর্ডার বন্ধ রাখার পাশাপাশি সিন্ধু জল বন্টন চুক্তিও আপাতত বন্ধ করা হচ্ছে।