সুমি রায়, কলকাতা: বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট জয় নতুন কিছু নয়, কিন্তু একই ব্যক্তি যদি ৩১ বার চূড়ায় পৌঁছান, সেটা নিঃসন্দেহে অবিশ্বাস্য! এই কীর্তির মালিক নেপালের কামি রিতা শেরপা, যিনি একের পর এক বিশ্বরেকর্ড ভেঙে চলেছেন নিজেই।
কে এই কামি রিতা?
কামি রিতা শেরপা নেপালের সোলুখুম্বু জেলার বাসিন্দা। জন্মেছিলেন ১৯৭০ সালে একটি সাধারণ শেরপা পরিবারে। তাঁর বাবা ছিলেন পর্বতগাইড, ছোট থেকেই পাহাড়ের প্রতি তাঁর ভালোবাসা জন্মায়। জীবন সংগ্রামের মধ্যেই বড় হয়েছেন কামি রিতা। কিন্তু পাহাড় ডাকার পর তিনি আর পেছনে ফিরে তাকাননি।
পর্বত আরোহন শুরু করেন নব্বই দশকের শুরুতে। প্রথমবার এভারেস্ট জয় করেন ১৯৯৪ সালে। তখনই শুরু হয় এক অসাধারণ যাত্রা।
কেমন করে গড়লেন এই রেকর্ড?
৭ মে ২০২৫-এ কামি রিতা ৩১তম বারের মতো এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন। বয়স ৫৪ হলেও তাঁর উৎসাহ ও সহনশীলতা দেখে অবাক হচ্ছেন অনেকে। তিনি শুধু নিজের রেকর্ডই ভাঙছেন না, পর্বতারোহণের ইতিহাসে লিখে চলেছেন নতুন অধ্যায়।
কামি রিতা পেশায় একজন শেরপা গাইড। বহু বছর ধরে তিনি পর্বতারোহীদের সহায়তা করে এসেছেন, কিন্তু একইসঙ্গে নিজেও অসংখ্যবার শৃঙ্গজয় করেছেন।
কেন এই রেকর্ড গুরুত্বপূর্ণ?
এভারেস্ট জয় করতে গেলে শুধু শারীরিক ফিটনেস নয়, প্রয়োজন মানসিক দৃঢ়তা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস বোঝার ক্ষমতা এবং পাহাড়ের ভাষা বোঝার অভিজ্ঞতা। একবার এভারেস্ট জয় করাই যেখানে একটি বিরাট কৃতিত্ব, সেখানে ৩১ বার এই কীর্তি সত্যিই অতুলনীয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কামি রিতা শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবে এক অবিশ্বাস্য পর্বতারোহী। তিনি প্রতিবারই দলের অন্যান্য সদস্যদের নিরাপদে গাইড করেছেন, যা একটি বড় দায়িত্ব।

কামি রিতার নিজের বক্তব্য
নিজের রেকর্ড নিয়ে খুব বেশি অহংকার করেন না কামি রিতা। তিনি বলেন:
“আমি এই কাজ করি শেরপা জনগোষ্ঠীর সম্মানের জন্য। আমরা পাহাড়ের সন্তান। যতদিন পারি, আমি পর্বতের জন্য কাজ করব।”
তিনি আরও বলেন,
“এই রেকর্ড আমার একার নয়, এটা আমাদের গোটা শেরপা সমাজের জয়।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বিশ্বজুড়ে তাঁর এই কীর্তির জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছেন কামি রিতা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম যেমন CNN, BBC, এবং National Geographic তাঁকে ‘The Everest Man’ বলে অভিহিত করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে।
এমনকি নেপাল সরকার তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত করার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে।