হাসিনা দেশ ছেড়েছেন প্রায় চার মাসের মত। নিজে আড়ালে থেকেই নিউইয়র্কের পর এবার লন্ডনে দ্বিতীয়বারের মতো জনসভা করলেন শেখ হাসিনা। সেই জনসভায় শোনা গেল শেখ হাসিনার ভার্চুয়ালি কণ্ঠস্বর। সেই জনসভায় শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান তথা শান্তিতে নোবেল জয়ী মোহাম্মদ ইউনূসকে ‘মাস্টারমাইন্ড খুনি’ বলে অভিহিত করলেন। এদিন তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের পাশাপাশি জুলাই বিপ্লব চলাকালীন খুন হয়ে যাওয়া দেশবাসীদেরও স্মরণ করলেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিন জনসভায় তিনি সরাসরি ইউনূসকে নিশানা করেছেন আন্দোলনের নামে নির্বীচারে বাংলাদেশ পুলিশ, ছাত্র, সাংবাদিক খুন এবং হালে ‘যাকে খুশি খুনের’ মামলায় জড়ানো নিয়ে। তিনি জোর গলায় কামব্যাক এর ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং বলেছেন বাংলাদেশের সংবিধান মেনে আমাদের বাংলাতে বিচার হবে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ইউনূসের। বাংলাদেশ নতুন করে দেখবে নতুন সূর্যোদয়। হাসিনার গোলা ছাপিয়ে লন্ডনের অডিটোরিয়ামে স্লোগান শোনা গেল ‘জয় বাংলা’। এমনকি সভায় উপস্থিত উত্তেজিত জনতার একাংশ গলা থেকে উঠে আসলো ইউনূসের ফাঁসির দাবি।
লন্ডনের সভার প্রচার বিজ্ঞপ্তিতে হাসিনাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেই উল্লেখ করেছিল আওয়ামী লীগ। হাসিনা নিজেও এই দাবি করেন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করলে তার বিচার হবেই। তিনি আরো বলেন ক্ষমতা হস্তান্তর তো হয়নি কোনদিন। এই সভার পুরোটা অংশ জুড়েই ছিল গত চার মাসে ফ্যাসিস্ট ও লুটেরা সরকার কিভাবে সোনার বাংলাকে নিয়ে তামাশা করে চলেছে তার খতিয়ান।
মুখোমুখি বৈঠকে বসছে দুই দেশ
জানা যাচ্ছে সব ঠিকঠাক থাকলে আজ অর্থাৎ সোমবার ঢাকায় যাচ্ছেন ভারতীয় বিদেশসচিব বিক্রম মিশ্রি। বাংলাদেশের সরকার বদলের পর এই প্রথম মুখোমুখি বৈঠকে বসতে চলেছে দুই দেশ। তবে সেই জনসভায় এই বৈঠক নিয়ে আগাম কিছু বলবেন বলে মনে করেছিল অনেকেই কিন্তু হাসিনা কিছুই বলেনি। নিজেই দুর্নীতি মামলার প্রসঙ্গ তুলে ইউনূসকে নিশানা করে বলেছেন সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছি আমার দুর্নীতি খুঁজে বার করুন। তিনি জনসভায় আরও বলেন আমি জানতে চাই সোনার বাংলার মানুষের জীবনের মনোন্নয়ন করে কি অপরাধ করেছি? সবার আগে ইউনূসের বাড়িতে তল্লাশি হোক, এই ভাষণের পরেই গোটা জনসভা জুড়ে সবচেয়ে বেশিক্ষণ ধরে হাত তালি পড়েছে।
তিনি জনসভায় আরো বলেছেন সরকার ফেলার ষড়যন্ত্র করেই ওরা লাস্ট ফেলতে শুরু করেছিল, আমি কিন্তু লাশের উপর লাশ ফেলতে চাইনি এক কথায় দেশ ছেড়েছি। এরপরেই সমস্ত তোপ গিয়ে পড়ে ইউনূসের ওপর, তিনি জানায় ইউনূসের জামানায় বাংলাদেশের মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। সেখানে আর মৌলিক অধিকার বলেও কিছু নেই। বর্তমানে বাংলাদেশে ন্যায়বিচার চাওয়ার সুযোগও নেই। বর্তমানে যে সরকার রয়েছে সে সরকার হলো লুটেরা সরকার শেয়ারমার্কেটের লক্ষ কোটি টাকা পাচার করছেন তিনি। অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেশবাসীকে রাস্তায় নামিয়েছেন এই সরকার।
তিনি আরো বলেছেন, কি ভেবেছে সরকার সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে, কী ভাবে মন্দির–প্যাগোডা–গির্জা, বাড়িঘর ধ্বংস করে আগুনে পোড়ানো হচ্ছে, বারবার এ সমস্ত বিষয় নিয়ে কাঠগড়ায় তুলছেন ইউনূস সরকারকে হাসিনা। তিনি আরো বললেন ইউনূস আসনে বসতেই না বসতেই জেল থেকে শতাধিক জঙ্গিকে কেন ছেড়ে দেওয়া হল, কেন একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামিদের বেকসুর খালাস করে দিল? এছাড়া হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারি নিয়ে কোন মন্তব্য না করলেও এই প্রসঙ্গ উঠে আসে তার ভাষণে। তিনি বলেন আইনজীবী পর্যন্ত দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি। কেন আইনজীবী দাড়াতে না পারলে সরকারের তরফ থেকে আইনজীবী দেওয়া দরকার ছিল। তবে তিনি সবশেষে আশা দিয়েছেন এই অন্ধকার কেটে যাবে বাংলাদেশে নতুন করে নতুন সূর্যের উদয় হবে।
সুমি ডেইলি খবর বাংলার সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন অভিজ্ঞ সংবাদ প্রণেতা। সংবাদ জগতে তার ৩ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, রাজনীতি, এবং সরকারি প্রকল্পের উপর নির্ভরযোগ্য ও তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন তৈরি করতে সুমি বিশেষ পারদর্শী। তার কাজের প্রতি আন্তরিকতা এবং সংবাদ উপস্থাপনার দক্ষতা এই প্ল্যাটফর্মকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। পাঠকদের কাছে সঠিক ও বিশ্লেষণমূলক তথ্য পৌঁছে দেওয়াই তার প্রধান লক্ষ্য।