ভারতের স্কুটার বাজার মানেই প্রথমে যে নামটা মাথায় আসে, সেটা হল Honda Activa। বছরের পর বছর ধরে এই মডেলটি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্কুটারগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল। তবে চলতি বছরে একটি বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে হোন্ডা। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে Honda Activa-এর বিক্রি এক ধাক্কায় প্রায় ২৫% কমেছে। এই পতনের খবর গাড়িপ্রেমীদের এবং বাজার বিশ্লেষকদের মধ্যে বিস্তর চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে।
তো প্রশ্ন হল, এমনটা হঠাৎ কীভাবে ঘটল? যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বীরা বিক্রি বাড়াচ্ছে, সেখানে অ্যাক্টিভার মতো একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড এতটা পিছিয়ে পড়ল কেন? এই প্রতিবেদনে আমরা খুঁজে দেখব পাঁচটি প্রধান কারণ, যা এই পতনের জন্য দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।
ইলেকট্রিক স্কুটারের চাপে দমবন্ধ অবস্থা
গত কয়েক বছরে ভারতের বাজারে ইলেকট্রিক স্কুটারের চাহিদা বেড়েছে অনেকগুণ। Ola, Ather, TVS-এর মতো ব্র্যান্ডগুলি একের পর এক আকর্ষণীয় মডেল আনছে, যেখানে আধুনিক ডিজাইন, স্মার্ট টেকনোলজি আর সাশ্রয়ী চার্জিং খরচ সব কিছুই রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে হোন্ডার পক্ষ থেকে ইলেকট্রিক সেগমেন্টে এখনও পর্যন্ত তেমন শক্ত অবস্থান নেওয়া হয়নি। Activa এখনও মূলত পেট্রোল-চালিত, যা তরুণ প্রজন্মের ক্রেতাদের কাছে এখন একটু “আউটডেটেড” বলে মনে হচ্ছে।
দাম বেড়েছে, কিন্তু ফিচার তেমন বাড়েনি
বর্তমানে Activa 6G-এর দাম প্রায় ₹৭৫,০০০ থেকে শুরু হয়। অথচ এই দামে এখন ক্রেতারা ডিজিটাল ড্যাশবোর্ড, কনেক্টিভিটি, রিভার্স মোড, অ্যাপ সাপোর্ট ইত্যাদি চাচ্ছেন, যা অনেক নতুন স্কুটারে দেওয়া হচ্ছে।
তুলনায়, অ্যাক্টিভায় খুব একটা বৈচিত্র্য দেখা যাচ্ছে না। মানে দাম বাড়লেও, ইনোভেশন কম এই বিষয়টি অনেক ক্রেতাকে পিছিয়ে দিচ্ছে।
ডিজাইন নিয়ে পুরনো অভিযোগ
Activa-এর ডিজাইন গত প্রায় দশ বছর ধরে খুব একটা বদলায়নি। একদিকে Ola বা Ather-এর মতো ব্র্যান্ডগুলি ফিউচারিস্টিক ও প্রিমিয়াম ডিজাইন আনছে, অন্যদিকে Activa এখনও সেই চেনা ফর্মেই রয়েছে।
নতুন প্রজন্ম, বিশেষত শহুরে তরুণ-তরুণীদের পছন্দ এখন স্টাইল, আধুনিকতা এবং পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং। Activa সেই জায়গায় পিছিয়ে পড়ছে।
আরও পড়ুন: হিরো আনছে নতুন ই-স্কুটার Vida Vx2, ১লা জুলাই বাজারে আসছে এই মডেল
প্রতিদ্বন্দ্বীদের আগ্রাসী বিপণন এবং স্কিম
এই সময়টাতে প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলি যেমন Ola, TVS, Suzuki ইত্যাদি আকর্ষণীয় অফার ও EMI স্কিম চালু করেছে। TVS iQube ও Ola S1-এর মত মডেলে সরকারের সাবসিডি থাকায় দামও কিছুটা কমে গিয়েছে।
অন্যদিকে হোন্ডার পক্ষ থেকে এপ্রিল মাসে বিশেষ কোনো ডিসকাউন্ট বা প্রচার চোখে পড়েনি। ফলে, অনেক ক্রেতাই অন্য ব্র্যান্ডের দিকে সরে গেছেন।
মডেল ভ্যারিয়েশন এবং আপডেটের অভাব
বর্তমানে অ্যাক্টিভার ৬G এবং Smart H-Smart মডেল থাকলেও, এই দুই মডেলের মধ্যে পার্থক্য খুব সীমিত। এমনকি হোন্ডার ১২৫cc সেগমেন্টেও খুব বেশি বিকল্প নেই। যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বীরা ক্রমাগত নতুন রঙ, নতুন এডিশন, টেক আপডেট আনছে, সেখানে অ্যাক্টিভার দিকে তেমন কোনো চলন দেখা যাচ্ছে না।