ভারতীয় নাগরিকদের জন্য নতুন ভাবনা হিসেবে কেন্দ্র চালু করতে চলেছে সিটিজেন কার্ড। আসলে ২০২৪ সালের বাজেটের পর থেকেই ভারতবর্ষের পরবর্তী জনগণনার কাজ শুরু হতে চলেছে। তার সঙ্গে চলবে জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি আপডেট করার প্রক্রিয়া। তবে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গেই উঁকি দিচ্ছে নতুন একটি পরিকল্পনা যার নাম হল সিটিজেন কার্ড। এ কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের অন্দরমহলে শুরু হয়ে গিয়েছে আলোচনা।
সুচিপত্র
Indian Citizen Card বা নাগরিকত্ব কার্ডের প্রস্তাব
জানা গিয়েছে NPR এর ভিত্তিতে বৈধ ভারতীয় নাগরিকদের জন্য একটি ইউনিক সিটিজেন কার্ড ইস্যু করার কথা ভাবছে কেন্দ্র। এই কার্ডের মধ্যে থাকবে বিশেষ একটি ইউনিক নম্বর, যা নাগরিকদের পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে। যদি এই পরিকল্পনাটি কার্যকর হয় তাহলে আমাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্ডের মধ্যে যোগ হবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কার্ড, যার নাম সিটিজেন কার্ড। তবে এই কার্ডটি বানানোর জন্য দেশের জনগণকে হয়তো আবারো নতুন করে তথ্য জমা দিতে হতে পারে এবং দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতেও হতে পারে।
এই কার্ড তৈরি প্রস্তাব কি নতুন?
না এই প্রস্তাব নতুন নয়। এর আগে ২০১৯ সালে আসামে NRC চালু করার সময় প্রথমবার এই ধারণা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করেন বৈধ এবং অবৈধ নাগরিকদের মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য তৈরির জন্য একটি ইউনিক নাগরিকত্ব কার্ড অপরিহার্য। তবে এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোন রকম চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি তবে অনেকের মনে করছেন যে আসন্ন বাজেটে অর্থ বাজেটের মাধ্যমে এই প্রস্তাবের প্রথম ধাপ হয়তো বাস্তবায়িত হতে পারে।
সেন্সাস ও NPR এর গুরুত্ব
সেন্সাস এবং এনপিআর আপডেট এর কাজ সাধারণত ১০ বছর অন্তর অন্তর করা হয়। সর্বশেষ ২০১০ সালে এই এনপিআর আপডেট করা হয়েছিল। পরবর্তী সময় ছিল ২০২১ সাল কিন্তু সে সময়ে করোনা পরিস্থিতির জন্য স্থগিত হয়ে যায়। তবে মনে হচ্ছে আগামী ২০২৫ সালের মার্চ এপ্রিল মাসে এই কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আপডেটের জন্য কত টাকার বাজেট
তবে এই আপডেটের জন্য ইতিমধ্যে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে সেন্সাস এর জন্য ৮৭৫৪ কোটি এবং এনপিআর এর জন্য ৩৯৪১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে এখানে যদি সিটিজেন কার্ডের পরিকল্পনা যুক্ত হয় তাহলে এই ব্যয় আরো বৃদ্ধি পাবে।
নাগরিকত্ব কার্ড বা সিটিজেন কার্ডের প্রয়োজনীয়তা
আমাদের যেগুলি বিভিন্ন ডকুমেন্ট রয়েছে ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, আধার কার্ড, সরকারি সূত্র অনুযায়ী এই কার্ডগুলোকে পুরোপুরি নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র হিসেবে গণ্য করা যায় না। তাই আলাদা করে একটি নাগরিকত্ব কার্ডের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আসল কথা জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্যই এই কার্ড আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সিটিজেন কার্ড চালু হলে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা যেমন সহজে মেটানো যাবে তেমনি এটি অবৈধ নাগরিকদের চিহ্নিত করতে সহায়ক হবে।
অন্যান্য পরিকল্পনা
২০২৬ সালের মার্চ মাসের সেন্সাস রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার কথা, এরপরে ডিলিমিটেশন কমিশন তৈরি করা হবে। এই কমিশনের কাজ হবে লোকসভা এবং বিধানসভার আসন পুনর্বিন্যাস করা। এছাড়া কেন্দ্র এর পাশাপাশি ‘ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন’ এবং অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (UCC)- র মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও জোর দিচ্ছে।
মোদি সরকারের ছটি মাইলফলক কি কি?
নতুন বছরের মোদি সরকারের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি মূলত ছয়টি বিষয়ে ধীরে আবর্তিত হবে সে বিষয়গুলো হলো
১. সেন্সাস
২. এনপিআর আপডেট
৩. ডিলিমিটেশন
৪. ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন
৫. অভিন্ন দেওয়ানি বিধি
৬. সিটিজেন কার্ড বা নাগরিকত্ব কার্ড।
উপরের এই ছটি পরিকল্পনায় পরবর্তী মাইলফলক হতে চলেছে মোদি সরকারের। এগুলির মধ্যে সিটিজেন কার্ড চালুর বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে থাকলেও এর প্রভাব হতে পারে বহুমুখী। তবে এই কার্ড চালু হলে তা জনগণের কতটা নিরাপত্তা এবং প্রশাসনিক কার্যকারিতা বাড়াবে তা ভবিষ্যতে জানা যাবে।
অমিত ডেইলি খবর বাংলার প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। পশ্চিমবঙ্গের এবং ভারতের সংবাদ সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য পরিবেশন করতে অমিত সর্বদা উদ্যমী। সংবাদ সংগ্রহ এবং তা পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রতি তার আগ্রহ এবং নিষ্ঠা এই প্ল্যাটফর্মকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সেরা এবং নির্ভুল খবর প্রদানই তার প্রধান লক্ষ্য।