অমিত সরকার, নয়াদিল্লি: সমস্ত তীর্থযাত্রীদের জন্য রয়েছে খুশির খবর, কারণ সম্প্রতি জানা গিয়েছে যে ভারত এবং চীন পুনরায় কৈলাস মানস সরোবরের যাত্রা (Kailash Mansarovar Yatra) চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই যাত্রা বন্ধ ছিল ২০২০ সাল থেকে।
তবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতিতে আবারো শুরু করতে চলেছে এই যাত্রা। পররাষ্ট্র সচিব বিপ্লব মিস্ত্রি এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে পুণ্যার্থীদের জন্য সরাসরি বিমান যাত্রা বিষয়ে কথা হয়েছে।
কৈলাস মানসরোবর যাত্রা (Kailash Mansarovar Yatra)
আসলে প্রত্যেক বছর ভারতীয় পুন্যার্থীরা জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভারত থেকে তিব্বতের মানস সরোবরে যাত্রা করে থাকেন। প্রতিবছর প্রায় শ’য়ে শ’য়ে ভক্তরা যান কৈলাসে। এই পূর্ণ যাত্রা হয়ে থাকে বিদেশ মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে। প্রথমে নাথু লা ও নিপুলেখ পাসের মাধ্যমে ভারত থেকে তিব্বতের প্রবেশ করেন তীর্থযাত্রীরা। সেখান থেকে সেই সমস্ত তীর্থযাত্রীদের কড়া নিরাপত্তায় তাদের কৈলাস পর্যন্ত নিয়ে যায় চীনা প্রশাসন। মূলত নেপালের বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সী পর্যটকদের কৈলাসে নিয়ে যায়। কৈলাস পর্বত এবং তিব্বতের মানস সরোবর হ্রদকে ঘিরে হয় এই যাত্রা ।
আসলে গত কয়েক বছরে লাদাখ এবং অরুণাচলে সীমান্তে ভারত-চীন সংঘাতে এই তীর্থযাত্রার ভবিষ্যৎ অনেকে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে ২০২০ সালে ১৫ই জুন গানওয়ালা উপত্যকায় চীনা ফৌজের আগ্রাসন প্রতিরোধ করলে দুই দেশের সেনার মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
সেই সংঘর্ষে প্রায় কুড়ি জন ভারতীয় সেনা শহীদ হন, এরপর থেকেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে। তবে অবশেষে ২০২৫ সালে দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে সেই জট কাটতে চলেছে। আসলে হিন্দুদের কাছে কৈলাস পর্বত হলো ভগবান শিবের পবিত্র বাসস্থান।
কিন্তু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ভগবান ব্রহ্মা এই মানস সরোবরের সৃষ্টি করেছিলেন। সেখানে স্নান করলে সমস্ত পাপ ধুয়ে যায় এবং পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয় বলেও বিশ্বাস করেন হিন্দুরা। এছাড়া বৌদ্ধদের কাছেও কিন্তু এই মানস সরোবরের ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। তাই ওই অঞ্চলে তীর্থ করতে যান দুই দেশের বহু সংখ্যক মানুষ।
পররাষ্ট্র সচিবের চীন সফর
পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্ত্রি ভারত ও চীনের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব উপমন্ত্রী মেকানিজম বৈঠকে যোগ দিতে বেইজিংয়ে দুই দিনের জন্য গিয়েছিলেন। এই বৈঠকটি আয়োজন করা হয়েছিল অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর মধ্যে হওয়ার চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়ার কাজানে।
সেই বৈঠকেই উভয়পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থিতিশীল ও উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে রাজি হয়েছে। মনে করা হচ্ছে তার ওই ফলশ্রুতি কৈলাসে মানুষ নিয়ে ভারত চীনের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত।
কবে থেকে চালু হবে কৈলাস মানসরোবর যাত্রা?
বিদেশ মন্ত্রক তার বিবৃতিতে বলেছে যে উভয়পক্ষ বৈঠক করে ২০২৫ সাল থেকেই এই মানস সরোবর যাত্রা পুনরায় শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটি শুরু হতে পারে ২০২৫ সালের গ্রীষ্ম কালে। দুই পক্ষই প্রয়োজনীয় পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য প্রাসঙ্গিক প্রক্রিয়া বিদ্যমান চুক্তি অনুযায়ী কাজ করবে।
এছাড়াও ভারত ও চীন বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের প্রক্রিয়ার একটি প্রাথমিক বৈঠকে সম্মত হয়েছে। সেখানে আরো বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা করা হবে, যেমন আন্তসীমান্ত নদী সম্পর্কিত জলবিদ্যুৎ সংক্রান্ত তথ্য পুনরুদ্ধার এবং অন্যান্য সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করা হবে।