সঞ্জয় একা নয়? আরজি কর মামলার নয়া রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর প্রশ্ন

Amit Sarkar

Published on:

R G Kar case

সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্সেস ল্যাবরেটরি এর রিপোর্ট থেকে একটি প্রশ্ন জোড়ালো হয়ে উঠেছে, সঞ্জয় রায় কি একাই অপরাধী? নাকি সঙ্গে আরোও একাধিক ব্যক্তি জড়িত ছিল তরুণীর চিকিৎসকের খুন ধর্ষণের ঘটনায়। এরকমই প্রশ্ন উঠে আসছে রিপোর্ট অনুযায়ী।

তবে আগাগোড়া থেকেই আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা দাবি করে এসেছেন যে আরজি কর ঘটনার কাণ্ডে সঞ্জয় নিশ্চয়ই একা ছিল না নির্ঘাত আরো কেউ জড়িয়ে ছিল। সেই তরুণী চিকিৎসকের দেহের আঘাতের চিহ্ন এবং তাকে খুনের ধরন দেখেই এই সন্দেহটি উঁকি দিয়েছিল অনেকের মনে। এইবার সেই সন্দেহকে পুনরায় উস্কে দিল সিএফএসএল-এর একটি রিপোর্ট। সেই রিপোর্টটিতে দাবি করা হয়েছে যে তরুণীর চিকিৎসকের যৌনাঙ্গে একাধিক ব্যক্তি মিশ্র ডিএনএ মেলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে সকলকে একটি কথা ভাবাচ্ছে ৯ ই আগস্ট ভোররাতে সঞ্জয়ের সাথে আরও কেউ ছিলেন কী না?

রিপোর্ট

নির্যাতিত এবং অভিযুক্ত সঞ্জয়ের নানা শারীরিক নমুনার পরীক্ষা করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে কয়েকটি ডিএনএ পরীক্ষা। কিন্তু সব পরীক্ষার রিপোর্ট এখনো আসেনি এরই মধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে সিবিআইকে জমা দেওয়া সিএফএসএলের একটি রিপোর্ট। আর সেই রিপোর্ট এর তথ্য দেখেই সকলের মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সিএফএসএল এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সমরাই স্বাক্ষরকৃত একটি রিপোর্টের ১২ নম্বর পাতা অনুযায়ী নির্যাতিতার স্তনবৃন্ত বা নিপল, পায়ু , এবং ভালভা বা যোনিদ্বারের সোয়াব নমুনায় ‘মাল্টিপল অটোজ়োমাল এসটিআর জেনেটিক প্রোফাইল’-এর সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। অর্থাৎ একাধিক ব্যক্তির ডিএনএ সেখানে থাকতে পারে বলে অনুমান করা যাচ্ছে। কারণ নমুনার হাইলি কন্টামিনেটেড ডিএনএ বা প্রবল মিশ্রিত ডিএনএর অস্তিত্ব মিলেছে।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এক চিকিৎসকের মতে

ফরেনসিক মেডিসিনের এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন যে রিপোর্টে যদি একথা বলা থাকে তাহলে সত্যি কিন্তু একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে মনে রাখতে হবে এই মিশ্রিত ডিএনএ যেমন একাধিক অপরাধীর হতে পারে তেমনি সঞ্জয় রায় এবং কিছু জীবাণুর মিশ্রিত ডিএনও হতে পারে। যদিও এই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে গত ২১ শে সেপ্টেম্বর সেই রিপোর্ট সিবিআই কে জমা দিয়েছিল মাল্টি ইনস্টিটিউশনাল মেডিকেল বোর্ড, তাতেও বলা হয়েছে একজনের পক্ষে এই অপরাধ ঘটানো সম্ভব হলেও হতে পারে সে কথা নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।

এছাড়াও ১১ জন সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠিত হয়েছিল সিবিআইকে সহায়তা করার জন্য সেই এমআই এমবির তরফেই এই রিপোর্ট দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কে চিকিৎসক সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডঃ ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক রাজীব পান্ডে বলেন এমআই এমবি কে সিবিআই প্রশ্ন করেছিল একজনের পক্ষে কি এ কাজ করা সম্ভব? তার উত্তর এই তিন নম্বর পয়েন্টে এমআইএমবি জানিয়েছে যে সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সিবিআই যদি উল্টো জিজ্ঞেস করত একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে কিনা তার উত্তর এমআইএমবি নিঃসন্দেহে একই উত্তর দিত।

আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের মতামত

তবে আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা অনেকেই আবার জানিয়েছেন যে একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না সিসিটিভি ফুটেজের কারণেও। সিবিআই তদন্তে উঠে এসেছে যে রাতে যখন খুন ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে সেই রাতে ৩.০৬ টা থেকে ৪.৩১ পর্যন্ত সেমিনার রুমের দিকে মোট চারজনকে যেতে দেখা গিয়েছে। তবে সেই চার জনের মধ্যে একমাত্র সঞ্জয়কে শনাক্ত করা গিয়েছে। এবং আশ্চর্যজনকভাবে বাকি তিনজনকে খুঁজে বের না করে কেবলমাত্র সঞ্জয়কে একমাত্র অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাই সকলের মনে একটা প্রশ্নের উঠছে যে বাকি তিনজন তাহলে কারা? এর উত্তর এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে সঞ্জয় যে এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত তা রিপোর্টও সেই তথ্যকে সমর্থন করে। কারণ নির্যাতিতার একাধিক যৌনাঙ্গে মেলা লালা ও নখের দাগের নমুনার সঙ্গে সঞ্জয় এর ডিএনএ প্রফাইল হুবহু মিলে গিয়েছে। তবে নির্যাতিতার যোনিতে কোনরকম বীর্যের নমুনা মেলেনি বলে অবশ্য জানিয়েছেন। তারা এও জানি সে যে যোনিতে বীর্যের নমুনা না মেলার তিনটি কারণ থাকতে পারে। হয় বীর্যপাত করা হয়নি যোনির মধ্যে অথবা কন্ডোম ব্যবহার করা হয়েছিল কিম্বা পুরুষাঙ্গ ছাড়া অন্য কোন অঙ্গ অথবা যে কোন ভোতা দণ্ডকার বস্তু প্রবেশ করানো হয়েছিল যোনিপথে। তবে এই নৃশংস ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কিনা সেই প্রশ্নের যুক্তিযুক্ত উত্তর এখনো মেলেনি।