অমিত সরকার, কলকাতা: বর্তমানে ছোট বড় সকলেই কিন্তু ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে। আর সেই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে কিন্তু আধার কার্ড এবং বড়দের প্যান কার্ড যুক্ত করতেই হয়। এবার সরকার রেশন কার্ডের সঙ্গে নাকি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংযুক্তি করা নিয়ে বড় সিদ্ধান্তের পথে হাঁটতে চলেছে।
আসলে ফেব্রুয়ারি ২৮ তারিখে কেন্দ্রীয় খাদ্য সচিবের নেতৃত্বে প্রতিটি রাজ্যের খাদ্য সচিবদের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আর সেই বৈঠকে কিন্তু রেশন কার্ডের সঙ্গে ব্যাংক একাউন্ট সংযুক্তি করার একটি প্রস্তাব পেশ করা হয়। এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে চূড়ান্ত কোন ঘোষণা করা হয়নি। তবে বর্তমানে এসে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। আসলে রেশন বন্টন নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ২০১৫ সালের নির্দেশিকায় সংশোধনের প্রস্তাবের কথা বলা হয়েছে। আর এই সংশোধন অনুযায়ী নতুন রেশন কার্ড যখন পরিবারের প্রধানের ই কেওয়াইসি ফর্ম পূরণ করা হবে, তখন রাজ্য সরকার রেশন কার্ডের সঙ্গে আধারের সংযুক্তিকরণের পাশাপাশি ব্যাংক একাউন্টের তথ্য নিয়ে নেবে।
নতুন এই পরিকল্পনার কারণ?
আসলে রেশন ব্যবস্থা যেন আরও স্বচ্ছ করে তোলা যায় এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় তাই এই ব্যবস্থা। বর্তমান সময়ে আধার লিংকের মাধ্যমে এক ব্যক্তি একাধিক রেশন না তুলতে পারলেও ব্যাংক একাউন্ট যুক্ত করলে আরো এ বিষয়টিতে স্বচ্ছতা আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকার মনে করছে এই পদ্ধতি মেনে চললে ভুঁয়ো রেশন কার্ড বন্ধ করা এবং ভবিষ্যতের নগদ ভর্তুকি ব্যবস্থা চালু করার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা যাবে।
ব্যাংক একাউন্টের সঙ্গে রেশন কার্ড লিঙ্ক করলে কী সুবিধা হবে?
রেশন কার্ডের সঙ্গে ব্যাংক একাউন্ট যদি লিংক করা হয় তাহলে যে সুবিধা গুলি পাওয়া যাবে সেগুলি হল
- প্রতিটি গ্রাহকের আসল পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
- যদি কোন ব্যক্তি একাধিক জায়গা থেকে রেশন তুলে তাহলে তা সহজেই ধরা যাবে।
- ভবিষ্যতে যদি এই রেশন ব্যবস্থা ভর্তুকি চালু হয় তাহলে তারা চাল গমের পরিবর্তে সরাসরি ব্যাংক একাউন্টে নিজেদের টাকা পেয়ে যাবে।
বেশ কিছু অসুবিধা
যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় তাহলে চিন্তায় পড়তে চলেছে ডিলাররা। মনে করা হচ্ছে কৃষকরা ও পড়তে পারে বিপদে। সর্বভারতীয় ফেয়ার প্রাইস অফ ডিলারস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু বলেন রেশন বিলির জন্য সরকার চাষীদের থেকে নির্ধারিত দামে চাল, গম কিনে থাকে। যদি সরকার তাদের থেকে তা না কিনে এবং গ্রাহকদের ব্যাংকে খাদ্য ভর্তুকির পথে হাটে তাহলে চাষিরা মুশকিলে পড়বেন। কারণ তখন চাষিদের কিন্তু সম্পূর্ণ বাজারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে। এমনিতেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী চাষীদের কাছ থেকে চাল, গম কেনার পরিমাণ কমে গিয়েছে। ২০২০-২১ সালে কৃষকদের কাছ থেকে তাও ৯ কোটি ৩৭ লক্ষ টন খাদ্য শষ্য কেনা হয়েছিল কিন্তু তা কমতে কমতে চলতি অর্থবছরের ৬ কোটি ৩৯ লক্ষ টনে নামবে বলে সরকারি অনুমান। তারপর যদি সরকার এই খাদ্য মূল্য ধরে দেওয়ার নীতি চালু করে তাহলে কৃষকরা আরো সমস্যায় পড়বেন।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
সাধারণ মানুষদের মধ্যে একাংশ মনে করছে যে ব্যাংক একাউন্ট যুক্ত করা হলে তারা সরাসরি রেশনের সুবিধা পেতে পারবেন। অন্যদিকে অনেকেই মনে করছেন যে যদি নগদ ভর্তুকির পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা হয়, তাহলে বাজারে যা দাম তাতে গরিবদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এখন এটাই দেখার পালা, যে সরকার কিভাবে এই পরিকল্পনাটি তৈরি করবে।
তবে এই নতুন নিয়ম চালু করা নিয়ে অনেকেই আবার নানা রকম প্রশ্ন তুলছেন। সত্যি সত্যি চাল গমের পরিবর্তে কী একাউন্টে টাকা দেওয়া হবে? তবে এখনো পর্যন্ত কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে এ বিষয়ে কোনো রকম চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি। এবার সবটা সময়ের উপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোন কাজ নেই। এখন দেখা যাক কেন্দ্র সরকার এবং রাজ্য সরকার ঠিক কী সিদ্ধান্ত নেয়।