ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের জন্য বড় ধাক্কা! আগামী ৬ মাস টাকা তোলা বন্ধ, কী বলছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক?

Published on:

RBI bans withdrawals from New India Co-operative Bank

অমিত সরকার, কলকাতা: ব্যাংক একাউন্ট বর্তমানে সকলের রয়েছে। আর এই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সকলে টাকা জমা রাখে এবং টাকা তোলে। সম্প্রতি একটি ব্যাংকের জন্য এসেছে বড়সড় দুঃসংবাদ। গ্রাহকরা নাকি নিজেদের অ্যাকাউন্ট থেকে ৬ মাস কোনরকম টাকা তুলতে পারবে না। আসলে বর্তমানে মুম্বাইয়ের একটি বড় কো-অপারেটিভ ব্যাংক গভীর সংকটের মুখে পড়েছে। আর ঠিক এই কারণেই সেই গ্রাহকদের জন্য এখন বড় ধাক্কা। সম্প্রতি ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক এই ব্যাংকের বিরুদ্ধে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, আর এর ফলেই গ্রাহকদের চিন্তা আরও বেড়ে গিয়েছে।

কেন টাকা তুলতে পারবে না?

বিভিন্ন খবর অনুযায়ী এই ব্যাংক বেশ কিছু সময় ধরে বড় ধরনের লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছিল। আর এই কারণেই ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের নজরদারিতে আসে এই ব্যাংকটি। আর রিজার্ভ ব্যাংক তখন সিদ্ধান্ত নেয় যে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা অবনতি হওয়ার কারণে ১৩ই ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী ৬ মাস কোনরকম লেনদেন করা যাবে না। অর্থাৎ ওই নির্দিষ্ট ব্যাংকের গ্রাহকরা টাকা তুলতে পারবে না। আর যার ফলে চিন্তায় পড়ে গেছে সেই ব্যাংক গ্রাহকরা। RBI এর একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ব্যাংকের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কোনরকম সেভিংস একাউন্ট, কারেন্ট একাউন্ট, বা অন্য কোন অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা যাবে না।

ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কতজন গ্রাহক?

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া একটা বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে একটি ব্যাংক নিয়ে। আসলে ধারাবাহিকভাবে লোকসানে চলা নিউ ইন্ডিয়া কো-অপারেটিভ ব্যাংকের ওপর বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যার ফলে ওই ব্যাংকের গ্রাহকরা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছে। মুম্বাই ভিত্তিক ওই ব্যাংকের ১.৩ লক্ষ গ্রাহকের ৯০% এরও বেশি মানুষ তাদের অ্যাকাউন্টে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জমা রেখেছেন। এই ব্যাংকের ২৮ টি শাখার বেশিরভাগই মুম্বাই মহানগরে অবস্থিত। আর ২ টি শাখা গুজরাটের সুরাটে এবং ১ টি শাখা পুনেতে রয়েছে।

আসল ব্যাপার

আসলে মুম্বাইয়ের একটি ব্যাংক বেশ কিছুদিন যাবত লোকসানে চলছিল। তবে সম্প্রতি ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে সেই ব্যাংকের হিসাব সংক্রান্ত কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। তারপরে RBI কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে ওই ব্যাংকের বিরুদ্ধে।

RBI মূলত এই ব্যাংকের বোর্ড ভেঙ্গে দিয়ে এক প্রশাসন নিয়োগ করে এবং তার সহায়তার জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটিও গঠন করে। তারপর নিউ ইন্ডিয়া কো-অপারেটিভ ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার এবং একাউন্টস প্রধান এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ১২২ কোটি টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছে মুম্বাই পুলিশ।

বর্তমানে মুম্বাই আদালত সেই ব্যাংকের জালিয়াতি মামলার প্রধান উপযুক্ত হিতেশ মেহতার পুলিশ হেফাজত ফেব্রুয়ারি ২৮ তারিখ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এছাড়া আদালত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকের প্রাক্তন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অভিমন্যু বোনকেও পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। বর্তমানে মুম্বাই পুলিশের অর্থনৈতিক অপরাধ শাখা এর মামলার তদন্ত করছে।

গ্রাহকদের টাকার কী হবে?

তবে এই ঘটনার মধ্যে সকলের বড় প্রশ্ন হচ্ছে যে, তাহলে গ্রাহকদের কষ্ট করে জমানো টাকার কী হবে? বর্তমান ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী যদি কোন ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায় বা দেউলিয়া হয়ে যায় তাহলে গ্রাহকরা সর্বত্র ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বীমা পায়। যদি এই পরিস্থিতিতে এই ব্যাংক দেউলিয়া হয় তাহলে তাদের গ্রাহকদের ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সুরক্ষিত থাকবে। গত কয়েক বছর ধরে আমানত বীমা এবং ঋণ গ্যারান্টি কর্পোরেশন এই ধরনের দাবি পরিশোধ করে আসছে। আগে এই বীমার পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ টাকা, ২০২০ সালে পিএমসি ব্যাংক কেলেঙ্কারির পর DICGC সেই বীমার পরিমাণ ১ লক্ষ টাকা বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করে। তবে সরকার ভবিষ্যতে এই টাকার পরিমান আরো বাড়াতে পারে বলে অনেকের আশা।

তবে ব্যাংকের এই পরিস্থিতি ব্যাংকের গ্রাহকদের ফেলেছে বিপাকে। এই ৬ মাস পর পরিস্থিতি কেমন হবে তা এখন বলা কঠিন। তবে সরকার এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক নজর রেখেছে ওই ব্যাংকের ওপর।

Amit Sarkar

অমিত Daily Khabor Bangla ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি ৫ বছর ধরে সংবাদ জগতে কাজ করছেন এবং বিভিন্ন ধরনের বিষয় নিয়ে লেখালেখির অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। বিশেষ করে দেশ, বিদেশ এবং সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে বিশ্লেষণ এবং লেখালেখি তাঁর প্রধান আগ্রহ। পেশার পাশাপাশি অমিত ভ্রমণ, বই পড়া এবং গান শুনতে ভালোবাসেন।