অমিত সরকার, কলকাতা: অবশেষে গত বছরের আরজিকর কান্ডের যে ধর্ষণ ও খুনের মামলা হয়েছিল সে মামলায় দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়ের সাজা ঘোষিত হল। গত বছরে যেদিন আরজিকর মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল থেকে এক চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছিল তার পরের দিনই পুলিশী তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিল সঞ্জয় ঘোষ। সেই আরজিকর কাণ্ডের ঘটনায় এক হয়েছিল গোটা বিশ্ব। সবাই চেয়েছিল দোষী যাতে উপযুক্ত শাস্তি পায়। কিন্তু প্রথমে পুলিশি তদন্ত হলেও পুলিশ কোন তদন্তের কিনারা করতে না পারলে হাইকোর্টের পক্ষ থেকে সেই দায়ভার দেওয়া হয়েছিল সিবিআই এর হাতে।
অবশেষে শনিবার সেই মামলারই সমস্ত তথ্য, প্রমাণ, সাক্ষ্য বিচার বিবেচনা করেন বিচারপতি অনির্বাণ দাস। তিনি সেদিন বলেছিলেন যে সোমবার দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়ের সমস্ত বক্তব্য শুনে তারপর তার শাস্তি ঘোষণা করা হবে। ভারতীয় ন্যায় সংহীতার ৬৪ (ধর্ষণ), ৬৬ (ধর্ষণ জনিত আঘাতের কারণে মৃত্যু), ১০৩ (১) (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়ের শাস্তি ঘোষণা হলো আজ। তবে সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে সমস্ত প্রমাণ অভিযোগ মিলে যাওয়ায় আইনজীবী মহলের একাংশের কথায় এখানে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি চাওয়া হয়েছিল, এই ঘটনা বিরলতম বলে দাবি করা হয়েছিল। বিচারক অবশ্য সঞ্জয়কে আগেই বলেছিলেন যে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার শাস্তি মৃত্যু দণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে এখন আমরা জেনে নেব আজকে আদালতে কি হয়েছে এবং সঞ্জয়ের কি সাজা ঘোষণা করা হয়েছে।
শাস্তি ঘোষণা
আজ দোষী সাব্যস্ত হওয়া সঞ্জয় রায় কে আরজি করের তরুণীর চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে আমৃত্যু কারাবাস দিলেন শিয়ালদহ অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস। এছাড়া সঞ্জয় কে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশও দেয় আদালত। রাজ্য নির্যাতিতার পরিবারকে সবমিলিয়ে মোট ১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে, এই নির্দেশে দিয়েছে আদালত। যদিও এই ক্ষতিপূরণ নিয়ে নির্যাতিতার বাবা জানান তিনি ক্ষতি পূরণ চান না। সেই সময় বিচারক বলেন এই মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ অর্থ দিয়ে করা যায় তা আমি মনে করি না। তবে কর্তব্যরত মহিলাদের রক্ষা করা রাজ্যের দায়িত্ব এবং পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতেই এই নিয়ম।
সঞ্জয়ের বক্তব্য
এদিন বিচারক সঞ্জয়কে তার বক্তব্য পেশ করার সুযোগ দিয়েছিলেন। সঞ্জয় কাঠগড়ায় হাতজোড় করে ওঠে এবং বিচারক সঞ্জয়ের উদ্দেশ্য করে বলেন আপনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত। এর পরই সঞ্জয়কে বলার সুযোগ দেন বিচারক, তখন সঞ্জয় বলে আমি ধর্ষণ করিনি আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি এই যদি কাজ করতাম সে ক্ষেত্রে আমার গলায় থাকার রুদ্রাক্ষের মালা নষ্ট হতো না আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমার ওপরে অত্যাচার করেছে। প্রথমে আমাকে কিছু বলতে দেওয়া হয়নি, যার যা ইচ্ছে সে রকমই করেছে। এছাড়া বিচারক আরো জিজ্ঞাসা করেন যে আপনার বাড়িতে কে কে আছে? কেউ যোগাযোগ করে কিনা? সঞ্জয় জানায় তার মা আছে। সবশেষে আদালতের পক্ষ থেকে সঞ্জয়ের সমস্ত বক্তব্য শুনে তার ধর্ষণ ও খুনের চেষ্টা অভিযোগে আমৃত্যু পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।