সোশ্যাল মিডিয়ার ফিল্টার ব্যবহারে বাড়ছে মানসিক চাপ! গবেষণায় মিলল নতুন তথ্য

Published on:

social media filter mental health

সুমি রায়, কলকাতা: সকলেই আমরা নিজের সুন্দর সুন্দর ছবি তুলতে পছন্দ করি, ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ছবি তুলে সেই স্থানের স্মৃতি হিসেবে আমরা জমিয়ে রাখি। তবে বর্তমানে সেই স্মৃতি শুধু স্মৃতি নয় সে স্মৃতিকে আরও সুন্দর করে তোলার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় নানারকম এপের মাধ্যমে আমরা ছবি তুলে থাকি। সবাই চেষ্টা করি নিজেদের ছবি যেন সবার থেকে সুন্দর হয়। তাহলে একবার ভাবুন তো আমরা কি সত্যিই আমাদের আসল চেহারা কে ভালোবাসি নাকি শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার ফিল্টারের মধ্যে দিয়ে নিজেদের এক কল্পনার রূপে দেখতেও অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি? কারণ আজকাল এমন অনেকেই রয়েছে যারা নিজেদের ফিল্টার ছাড়া ছবি তুলতে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে লজ্জা পায়। এখন তো কিছু মানুষ মেকআপ ছাড়াও বাড়ি থেকে বের হতে চায় না। এটা কি সত্যিই স্বাভাবিক ব্যাপার?

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বিশেষজ্ঞদের মতে এই ফিল্টার নির্ভরতা ধীরে ধীরে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য কে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে। তাই এখনই সময় থাকতে থাকতে মানুষের সতর্কতা হওয়া খুবই প্রয়োজন। এবার গবেষণার আলোকে জেনে নেওয়া যাক কেমন করে ফিল্টার নির্ভরতা আমাদের আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক শান্তি কে নষ্ট করে দিচ্ছে।

মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব

বিশেষজ্ঞদের মতে এই ফিল্টারের মোহ মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলছে। মানসিক বিশেষজ্ঞ ডঃ বিধি এম পিলনিয়া বলেছেন, মানুষ প্রতিদিন ফিল্টার ব্যবহার করার ফলে অবাস্তব সৌন্দর্যের এক ধারণায় আটকে পড়ে। তারপর যখন সে ফিল্টার ছাড়া নিজের মুখ আয়নায় দেখে তখন মনে হয় যেন কিছু একটা ভুল আছে, অথচ সেটাই তার আসল চেহারা।

গবেষণার ফলাফল

  • পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এর গবেষণা দেখা গেছে যে যারা সোশ্যাল মিডিয়া কম ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে একাকীত্ব ও ডিপ্রেশনের লক্ষণ অনেকটাই কম। আর যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের রূপ নিয়ে সচেতন তারা মানসিক চাপ ও হতাশায় ভোগে।
  • ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের গবেষণায় জানা গেছে, দীর্ঘক্ষণ রিলস বা ফিল্টার যুক্ত ছবি দেখার কারণে আমাদের ঘুমের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এতে করে মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে।
  • হাসপাতালে শিশু মনোবিজ্ঞানী জানিয়েছেন কিশোররা এখন নিজেদের বাস্তব চেহারা ফিল্টারের সাথে তুলনা করছে। এতে করে কিন্তু তাদের আত্মবিশ্বাস কমবে সামাজিক যোগাযোগ দুর্বল হবে এমনকি পড়াশোনায় মনোযোগের ও ঘাটতি দেখা দেবে।

ফিল্টার আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসার উপায়

  • নিজেকে ভালোবাসুন্ অর্থাৎ নিজের প্রকৃত সৌন্দর্যকে ভালবাসুন। নিজের ফিল্টার ছাড়া ছবি তুলুন এবং পোস্ট করুন এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
  • যতটা পারবেন ফিল্টার এড়িয়ে চলবেন। ফিল্টার ব্যবহার করতে পারবেন কিন্তু সেটাকে নির্ভরতা বানাবেন না।
  • সব সময় মনে রাখবেন আসল সৌন্দর্য মনের ভেতর কিন্তু শুধু বাহ্যিক পরিবর্তনে নেই কিন্তু আসল সৌন্দর্য আত্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিত্বের মধ্যে লুকিয়ে থাকে।
  • মাঝে মাঝে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকুন প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটান।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে অতিরিক্ত ফিল্টার ব্যবহারের ফলে মানুষ বাস্তবতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এবং নিজেদের প্রকৃতির রূপ তাদের অসুবিধা হচ্ছে ফলে হতাশা ও হীনমান্যতা বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া ডক্টর অনিল সিং শেখাওয়াজ আরো যোগ করে বলেছেন যে এখানকার কিশোর কিশোরীরা শুধু সুন্দর দেখানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিশোর কিশোরীরা বাবা-মায়ের কাছ থেকে দামি ক্যামেরা, লাইট, ও সেটআপ কিনে রিল বানানোর দিকে বেশি মনোযোগী হচ্ছে এটিও কিন্তু মানসিকভাবে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে কারণ তারা বাস্তব জীবন থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।

আসলে ফিল্টার দিয়ে ছবি নিঃসন্দেহে খালি ক্যামেরার ছবির থেকে অনেক সুন্দর করে তোলে। তবে কিশোর কিশোরীরা এটাও বুঝতে পারে না যে বাস্তব জীবন ফিল্টারের মত নয়। তাই সবাই নিজেকে ভালোবাসেন নিজের প্রকৃত সৌন্দর্যকে সম্মান করুন মনে রাখবেন ফিল্টারের পেছনে লুকিয়ে থাকা চেহারাটাই আপনার সত্যিকারের পরিচয় এবং সেটাই সবচেয়ে সুন্দর। কারণ ফিল্টার শুধু বাহ্যিক পরিবর্তন আনে কিন্তু আসল সৌন্দর্য আত্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিত্বের মধ্যে লুকিয়ে থাকে।

Sumi Roy

সুমি Daily Khabor Bangla ওয়েবসাইটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। সংবাদ জগতে ৩ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। খেলা এবং প্রযুক্তি নিয়ে নির্ভরযোগ্য ও তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন তৈরিতে সুমি বিশেষ পারদর্শী। তাঁর আন্তরিকতা ও সংবাদ উপস্থাপনার দক্ষতা এই প্ল্যাটফর্মকে সমৃদ্ধ করেছে। পাঠকদের কাছে সঠিক ও বিশ্লেষণমূলক তথ্য পৌঁছে দেওয়াই তাঁর প্রধান লক্ষ্য।