সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে নতুন একটি আইন পাস করা হয়েছে। সম্পত্তি নিয়ে চালু হল নতুন নিয়ম। এবার যারা বৃদ্ধ পিতামাতাকে দেখাশুনা করবে না তারা বাতিল পড়বে সম্পত্তি থেকে। অর্থাৎ যে সমস্ত ছেলে-মেয়ে বৃদ্ধ বাবা মাকে দেখাশোনা করবে না সে সমস্ত সন্তানরা পৈত্রিক সম্পত্তি পাবে না। যদি সম্পত্তি সন্তানের নামে লিখে দিয়ে থাকে তাহলেও তা বাজেয়াপ্ত হতে পারে। এমনই নির্দেশ দিয়েছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট। এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন।
সুচিপত্র
সুপ্রিম কোর্টের নতুন নিয়ম
এখন থেকে আর বাবা-মার প্রতি সন্তানের অবহেলা চলবে না। যদি কোন বাবা মা আগেই সন্তানকে তার সম্পত্তি দান করে দিয়ে থাকে পরেও যদি তারা দেখাশোনা না করে বাবা-মায়ের তাহলেও সেই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হতে পারে। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এইরকমই যুগান্তকারী রায় জানিয়েছেন, যদি কোন সন্তান তার বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সঠিকভাবে যত্ন না নেয় তবে তার দান করা সম্পত্তির পুনরুদ্ধার করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে সকলেই সহমত জানিয়েছেন। এতে করে প্রবীণ নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষিত হবে। এই কারণেই সুপ্রিম কোর্ট এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এবার থেকে সকলের বাবা মাকে খুব ভালোভাবে দেখাশোনা করতে হবে এবং যত্ন নিতে হবে, নইলে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে পৈত্রিক সম্পত্তি।
সুপ্রিম কোর্ট কোন মামলার রায় দিল?
আমরা প্রায় প্রতিনিয়ত এরকম খবর শুনে থাকি যে বাবা মা বৃদ্ধ হয়ে গেলে সন্তানরা তাদের অবহেলা করে অর্থাৎ বাবা-মা সন্তানদের কাছে অবহেলার শিকার হয়েছেন। ঠিক এমনই এক ঘটনা ঘটেছিল মধ্যপ্রদেশের উর্মিলা দীক্ষিত নামক এক বৃদ্ধার সঙ্গে। সে বৃদ্ধা পরে আদালতে অভিযোগ করেন যে তার সন্তানকে দানপত্রের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর করার পর তিনি অবহেলা শিকার হয়েছেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সেই মামলার ভিত্তিতেই নির্দেশ দিয়েছেন যে প্রবীণ নাগরিক আইনে ২৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী মহকুমা শাসক বা সংশ্লিষ্ট ট্রাইবুনালের অধিকার রয়েছে এই ধরনের দানপত্র বাতিল করার। এই আইনটি ২০০৭ সালে প্রবীণ নাগরিকদের সুরক্ষার জন্যই প্রণীত হয়। যদি সন্তান দানপত্রের পর তাদের বাবা-মায়ের দেখভাল করতে ব্যর্থ হয় তবে তারা তাদের সম্পর্কে ফেরত চাইতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে সমাজের এই ব্যাধি বন্ধ করতে মহকুমা শাসকদের দেওয়া এ ক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে প্রবীণ বাবা-মা সন্তানের প্রতি ভালোবাসা এবং বিশ্বাস থাকে তাদের অর্জিত সমস্ত সম্পত্তি সন্তানের নামে লিখে দেয় কিন্তু পরবর্তী সময় দেখা যায় যে সন্তানেরা সেই বাবা মায়ের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করে এমনকি নিজের বাবা মাকেও বাড়ি থেকে বের করে দিতেও দ্বিধাবোধ করে না। এই কারণেই সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছে। তবে এর আগেও কলকাতা হাইকোর্টের প্রবীণ নাগরিকদের অধিকার নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চে অনেক মামলায় দেখা গিয়েছে সন্তানদের কাছে দানপত্রের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর করার পর বাবা-মায়েরা অবহেলার শিকার হয়েছে। যদিও হাইকোর্টের আগের কিছু রায় দানপত্রের বাতিলের দাবি খারিজ করা হয়েছিল, তবে সুপ্রিম কোর্টের রায় নতুন করে আলোকপাত করছে।
সুপ্রিম কোর্টের কোন বিচারপতি দিয়েছে এই রায়?
জানা গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সিটি রবি কুমার এবং বিচারপতি সঞ্জয় করোলের ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় প্রদান করে। তারা মন্তব্য করেছেন বৃদ্ধা বাবা-মায়ের অধিকার সুরক্ষায় এই আইন প্রয়োগ করা অত্যন্ত জরুরী। সন্তানরা যদি তার বাবা মায়েদের যত্ন বা দেখভাল না করে তাহলে তো তারা সম্পত্তি থেকে বাতিল হবেই। এছাড়া সন্তানের কাছে দান পত্র করে সম্পত্তি দিলে বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের যত্ন নেওয়া বাধ্যতামূলক, তা নাহলে দানপত্র বাতিল করা হবে। তবে সুপ্রিম কোর্টের এই রায় প্রবীণ নাগরিকদের মধ্যে আশার আলো দেখিয়েছে। এখন থেকে তারা তাদের অধিকার বুঝে নিতে পারবে এবং সন্তানের অবহেলা থেকে মুক্তি পাবে।
অমিত ডেইলি খবর বাংলার প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। পশ্চিমবঙ্গের এবং ভারতের সংবাদ সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য পরিবেশন করতে অমিত সর্বদা উদ্যমী। সংবাদ সংগ্রহ এবং তা পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রতি তার আগ্রহ এবং নিষ্ঠা এই প্ল্যাটফর্মকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সেরা এবং নির্ভুল খবর প্রদানই তার প্রধান লক্ষ্য।