WBSSC অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন প্রতি বছর Group C ও Group D বিভাগে বিভিন্ন পদে কর্মী নিয়োগ করে থাকে। ২০২৫ সালেও একইভাবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং বহু চাকরি প্রার্থী ইতিমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। এই নিয়োগে অংশগ্রহণ করার আগে প্রার্থীদের উচিত পরীক্ষার পদ্ধতি, যোগ্যতা, সিলেবাস এবং প্রস্তুতির কৌশল সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেওয়া। এই নিবন্ধে আমরা সেই বিষয়গুলোই পরপর ব্যাখ্যা করব।
আবেদনযোগ্যতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা
WBSSC Group C ও D পরীক্ষায় আবেদন করার জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতার নিরিখে, সাধারণত মাধ্যমিক অথবা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ প্রার্থীরাই এই পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে কিছু বিশেষ পদে (যেমন টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট বা লাইব্রেরিয়ান) অতিরিক্ত ডিপ্লোমা বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হতে পারে। বয়সসীমা সাধারণত ১৮ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, যদিও সংরক্ষিত শ্রেণির প্রার্থীদের জন্য বয়সে ছাড় দেওয়া হয় সরকারি নিয়ম অনুযায়ী।
নির্বাচন পদ্ধতি
Group C ও D পরীক্ষায় নিয়োগ প্রক্রিয়া একাধিক ধাপে বিভক্ত। প্রথম ধাপ হলো লিখিত পরীক্ষা, যা বাধ্যতামূলক। কিছু নির্দিষ্ট পদের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষার পরে টাইপিং টেস্ট বা স্কিল টেস্ট হতে পারে। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রার্থীদের প্রতিটি ধাপ উত্তীর্ণ হতে হবে এবং মেধা তালিকায় স্থান পেতে হবে।
লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের কাঠামো
লিখিত পরীক্ষাটি মূলত চারটি বিষয়কে কেন্দ্র করে হয় যেমন সাধারণ জ্ঞান, চলতি ঘটনা, ইংরেজি এবং গণিত। প্রতিটি বিষয়ে ১৫টি করে প্রশ্ন থাকে এবং মোট প্রশ্ন সংখ্যা হয় ৬০টি। সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় এক ঘণ্টা এবং প্রতিটি প্রশ্নের জন্য এক নম্বর বরাদ্দ থাকে। পরীক্ষায় কোনও নেতিবাচক মার্কিং নেই, যা অনেকের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে।
প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত সিলেবাস
WBSSC লিখিত পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট সিলেবাস রয়েছে। সাধারণ জ্ঞান বিভাগে ভারতের ইতিহাস, পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সংবিধান সংক্রান্ত প্রশ্ন থাকে। চলতি ঘটনার বিভাগে বিগত ছয় মাসের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ, ক্রীড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত হয়।
ইংরেজি বিষয়ে সাধারণত গ্রামার, বাক্য গঠন, শব্দার্থ এবং comprehension অংশ থেকে প্রশ্ন আসে। গণিত বিভাগে থাকে সংখ্যার পদ্ধতি, গড়, শতকরা হার, অনুপাত, লাভ-ক্ষতি, সরল সুদ ও সময় ও কাজ বিষয়ক সমস্যা। প্রতিটি বিষয়েই মাধ্যমিক স্তরের জ্ঞান থাকলেই ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
সাধারণ জ্ঞান থাকে কোন কোন বিষয় থেকে প্রশ্ন আসবে?
এই বিভাগে সাধারণত ভারতের ইতিহাস, স্বাধীনতা সংগ্রাম, পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য ও সংস্কৃতি, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, ভারতীয় অর্থনীতি ও সংবিধানের মৌলিক ধারণা অন্তর্ভুক্ত থাকে। এতে প্রার্থীদের সাধারন জ্ঞান ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা যাচাই করা হয়।
চলতি ঘটনা সম্পর্কিত প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত
এই অংশে ভালো করতে হলে নিয়মিত সংবাদপত্র পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বিগত মাসগুলোর গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ, সরকারী প্রকল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নতুন আবিষ্কার এবং খেলাধুলা সংক্রান্ত তথ্য জানা থাকা জরুরি।
ইংরেজি বিষয়ের জন্য কী কী পড়তে হবে?
ইংরেজি বিভাগে সফলতা পেতে হলে গ্রামারের মূলনীতি ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। Articles, Prepositions, Tense, Subject-Verb Agreement ইত্যাদি চর্চা করা দরকার। পাশাপাশি প্রতিদিন ৫–১০টি ইংরেজি বাক্য অনুবাদ ও পাঠ্যাংশ বিশ্লেষণ করলে উন্নতি হবে।
গণিত অংশে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ও সমস্যা সমাধান কৌশল
গণিত বিভাগে ভালো ফলাফল করার জন্য মৌলিক অঙ্কের ধারণা থাকতে হবে। দশমিক, ভাগ, শতকরা, লাভ-লোকসান, সরল সুদ, গড় এবং সময়-দূরত্ব সম্পর্কিত অঙ্ক নিয়মিত চর্চা করতে হবে। প্রতিদিন সময় ধরে প্র্যাকটিস করলেই ভুল কমে যাবে।
আরও পড়ুন: SBI Clerk Recruitment 2025: 2964 শূন্যপদে চাকরির সুযোগ, শেষ তারিখ ২৯ মে!
WBSSC পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার প্রস্তুতি কৌশল
প্রস্তুতির জন্য প্রথমেই অফিসিয়াল সিলেবাস অনুযায়ী একটি স্টাডি প্ল্যান তৈরি করা উচিত। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ধরে পড়াশোনা করা, মক টেস্ট দেওয়া এবং বিগত বছরের প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করাও অত্যন্ত জরুরি। টপিকভিত্তিক ছোট নোট তৈরি করে নিয়মিত রিভিশন করলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে এবং পরীক্ষার হলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
আবেদন প্রক্রিয়া ও অফিসিয়াল তথ্যসূত্র
WBSSC এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (https://wbssc.gov.in) আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কিত সকল তথ্য পাওয়া যাবে। আবেদন শুধুমাত্র অনলাইনের মাধ্যমে হবে এবং নির্দিষ্ট ফি প্রদান করতে হবে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে। সময়মতো ওয়েবসাইটে ভিজিট করে বিজ্ঞপ্তি, প্রবেশপত্র ও ফলাফল সম্পর্কিত আপডেট দেখে নেওয়া উচিত।
চাকরি প্রার্থীদের জন্য চূড়ান্ত পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
WBSSC Group C ও D চাকরি শুধু একটি পদের জন্য নয়, বরং একটি স্থিতিশীল ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তাই সময় নষ্ট না করে এখন থেকেই নিয়মিত প্রস্তুতি শুরু করা উচিত। সঠিক পরিকল্পনা, অধ্যবসায় এবং ধৈর্য ধরে পড়াশোনা করলে অবশ্যই সফলতা অর্জন করা সম্ভব।