অমিত সরকার, কলকাতা: অনেকদিন ধরেই অভিযোগ উঠছিল, পশ্চিমবঙ্গে ওবিসি (অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণী) সার্টিফিকেট অবৈধভাবে তৈরি করা হয়েছে। এই নিয়ে চলছিল একাধিক মামলা। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে জানিয়েছে, ২০১০ সালের পর রাজ্য সরকার যে সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট প্রদান করেছে, তার একটি বড় অংশ বেআইনি বলে গণ্য হবে।
হাইকোর্টের রায় কী বলা হয়েছে?
রায় অনুযায়ী, ২০১০ সালের পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে সমস্ত জাতিকে ওবিসি তালিকাভুক্ত করেছে, তা সংবিধানের ৩৪২এ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। কারণ, এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনও রাজ্য সরকার নিজের মতো করে ওবিসি তালিকা তৈরি করতে পারে না — কেন্দ্রীয় ওবিসি কমিশনের সুপারিশ ও সংসদের অনুমোদন ছাড়া তা বৈধ নয়।
কতজনের সার্টিফিকেট বাতিল হতে পারে?
সূত্রের খবর অনুযায়ী, প্রায় ৫০০টি জাতি এই সিদ্ধান্তের আওতায় আসতে পারে। এতে পাঁচ লক্ষেরও বেশি ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যেগুলি ২০১০ সালের পর প্রদান করা হয়েছে। তবে, যারা ইতিমধ্যে এই সার্টিফিকেট ব্যবহার করে চাকরি বা উচ্চশিক্ষার সুবিধা পেয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় বা ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
কে কে প্রভাবিত হবেন?
এই রায়ের ফলে মূলত সেই সমস্ত ছাত্রছাত্রী ও চাকরিপ্রার্থীরা প্রভাবিত হবেন, যারা ২০১০ সালের পর ওবিসি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন। সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে এই সিদ্ধান্ত একটি বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রায়ের কড়া সমালোচনা করে বলেন, “এই সিদ্ধান্ত সংবিধান ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।” তিনি জানান, যাঁরা বর্তমানে ওবিসি সার্টিফিকেটের মাধ্যমে সরকারি সুযোগ পাচ্ছেন, তাঁদের রক্ষা করতে রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
আরও পড়ুন: DA মামলায় বড় আপডেট! রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ফের আইনি নোটিশ
কী করণীয়?
যেহেতু এই রায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে এবং এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, তাই:
- নিজের সার্টিফিকেটের বৈধতা যাচাই করুন।
- প্রয়োজনীয় নথিপত্র ও রেকর্ড সংরক্ষণ করুন।
- নতুন করে সার্টিফিকেট আবেদন করার আগে আইনজীবীর পরামর্শ নিন।
- সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিক থেকেও নজর রাখুন।
ভবিষ্যতের দিকে নজর
এই সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র আইনি বিষয় নয়, বরং আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এটি একটি বড় রাজনৈতিক বিতর্ক হয়ে উঠতে পারে। লক্ষ লক্ষ মানুষ এই মুহূর্তে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন এবং তাঁদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে উচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ের উপর।