ইন্দ্রাণী সরকার, কলকাতা: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে রাজ্যে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নিয়োগ হতে চলেছে। যে সমস্ত ইচ্ছুক প্রার্থীরা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং সুপারভাইজার পদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তাদের প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে। আসলে রাজ্যে আইসিডিএস পদের সুপারভাইজার পদে নিয়োগের প্রক্রিয়ায় আইনি জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন আটকে ছিল।
আর সেই কারণে রাজ্যে এতদিন কোনরকম অঙ্গনওয়াড়ি নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়নি। তাই এত বছর পর সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী বেঞ্চ রায়ে রাজ্যের প্রায় ৫০-৫০ অনুপাতে ICDS কর্মী নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে। আর এই নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্য এবার প্রায় ১৭,০০ শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করবে।
WB ICDS সুপারভাইজার নিয়োগ
পশ্চিমবঙ্গে এর আগে আইসিডিএস সুপারভাইজার পদে নিয়োগ হয়েছিল ১৯৯৮ সালে শেষবারের মতো। তারপর থেকে আইনের জটিলতার কারণে কোন নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়নি। তবে দীর্ঘ একুশ বছর পর 2019 সালে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে পুনরায় ৩৪৫৮ টি শূন্য পদে কর্মী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা
২০১৯ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কেন্দ্র সরকারের ২০১৫ সালের নির্দেশিকা মানা হয়নি। যেখানে কেন্দ্র সরকারের নির্দেশ ছিল মোট শূন্য পদের ৫০% পদ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হবে, তবে ১৫ সালের এই নিয়ম রাজ্য সরকার অমান্য করেছে একাধিকবার।
এমনকি ২০১৯ সালের রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের পদোন্নতির মাধ্যমে মোট পদের সংখ্যা ছিল ৪২২ টি। আর বাকি সংখ্যা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৩০৩৬ টি। বাকি রাখা শূন্য পদগুলিতে সরাসরি নিয়োগের পরিকল্পনা করেছিল রাজ্য সরকার। আর এটাই ছিল কেন্দ্র সরকারের নির্দেশ অমান্য করা। এরপরই রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একাধিক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী আদালতের দারস্ত হয়েছিল। অবশেষে আদালতের গায়ে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের জয় হয়েছে।
আদালতের নির্দেশ
আসলে ২০১৯ সালে রাজা সরকারের তরফ থেকে ICDS কর্মী নিয়োগের যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল সবগুলো অবৈধ। তাই ICDS এর কর্মীরা সেই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিল। অবশেষে সেই মামলার ভিত্তিতেই 2023 সালের 19 সেপ্টেম্বর বিচারপতি ললিতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দেন।
তিনি জানান কেন্দ্র সরকারের এই নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ৫০ শতাংশ শূন্য পদ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। কিন্তু এই রায় উপেক্ষা করেছিল রাজ্য সরকার এবং সরাসরি সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে যায়।
এরপর যখন ২০২৪ সালে মামলাটির বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চে উঠে সে সময় মামলাকারীদের আইনজীবীরা রাজ্য সরকারের একাধিক অনিয়ম তুলে ধরে কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে। পরে বিচারপতি মান্থা তার রায় জানান যে বিচারপতির ললিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগের নির্দেশ বহাল রয়েছে এবং সেই নির্দেশ অমান্য করা বেআইনি।
রাজ্য সরকারের আগে প্রকাশিত ৩৪৫৮ টি শূন্য পদের মধ্যে ১৭২৯ টি শূন্য পদ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মধ্য থেকে পূরণ করতে হবে। আদালতের এই রায়ের সমস্ত অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা খুশি হয়েছেন এবং সারা সুবিচার পেয়েছেন বলে মনে করছেন।
যেহেতু আদালতের নির্দেশে ৩৪৫৮ টি শূন্য পদের মধ্যে ১৭২৯ টি পদ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মধ্য থেকে পূরণ করতে হবে আর বাকি শূন্যবাদ গুলি রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করতে পারবে। তাই আগামীতে খুব শীঘ্রই এই জটিলতা কাটিয়ে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে চলেছে।
যদি রাজ্য সরকার আদালতের এই নির্দেশ মেনে দ্রুত কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে তাহলে ১৭০০ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে। তবে রাজ্য সরকার আদালতের নির্দেশ মানবে কি মানবে না? এ সমস্ত একাধিক তথ্য, এছাড়া কবে সেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে এবং কতগুলো শূন্য পদ তাতে থাকবে? এই সমস্ত একাধিক তথ্য জানতে হলে আমাদের বিভিন্ন চ্যানেলে যুক্ত হতে পারেন।